বছরে এক লাখ মণ কাঠ পুড়ছে খাগড়াছড়ির তামাকচুল্লিতে

খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো তামাকচুল্লি গড়ে উঠছে। এসব চুল্লি তৈরি ও তামাক শুকানোর কাজে প্রতিবছর অন্তত এক লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তামাকচুল্লি নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কোনো আইন না থাকায় এসব চুল্লি তৈরি ও কাঠ পোড়ানোর কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
তামাক চাষ হয় এমন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তামাক শুকানোর জন্য অনেকের বসতভিটার পাশে তামাকচুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে প্রচুর কাঠ। তামাকের ক্ষতিকর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধের মধ্যেই তামাক শুকানোর কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য কিংবা শ্রমিকেরা। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিচিতলার বাঙালিপাড়া, গামারিঢালা ও ম্যাজিস্ট্রেটপাড়াসহ আশপাশের তিন গ্রামে ১৪টি তামাক চুল্লি রয়েছে বলে গ্রামবাসী জানান।
সম্প্রতি বিচিতলা এলাকার বাঙালিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বসতভিটার কাছেই তৈরি করা হয়েছে তামাকচুল্লি। প্রতিটি চুল্লি তৈরিতে অন্তত ২০ ফুট লম্বা ২৭টি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। মুলিবাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে ২৫০টি। প্রতিটি চুল্লিতে তামাক শুকাতে প্রতিবার ৫০-৬০ মণ কাঠ জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এ রকম সদ্যনির্মিত একটি চুল্লির মালিক-কৃষক আবুল বাশার (৫৮) জানান, প্রতিটি চুল্লিতে দুই থেকে আড়াই হেক্টর জমির উৎপাদিত তামাক শুকানো যায়। একটি চুল্লি ছয়-সাত বছর টিকে থাকে। যাঁদের নিজের জ্বালানি কাঠ নেই তাঁরা পাহাড়িদের বাগান থেকে গাছ কিনে ব্যবহার করেন।
সংশ্লিষ্ট চুল্লির মালিক-চাষিরা জানান, তামাক চাষ ক্ষতিকর জানা সত্ত্বেও আর্থিক লাভের নিশ্চয়তা থাকায় তাঁরা তামাক চাষ নিরাপদ মনে করেন। তাঁরা জানান, তামাকের বীজ ও বীজতলা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পলিথিন বিনা মূল্যে তামাক কোম্পানি থেকে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোম্পানির কাছ থেকে বাকিতে সার এবং প্রতি হেক্টর তামাক চাষের জন্য ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়ি জেলায় এক হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। প্রতি আড়াই হেক্টর জমির বিপরীতে একটি হিসেবে জেলায় চুল্লি রয়েছে ৪১২টি। এসব চুল্লি তৈরিতে গাছ ব্যবহার করা হয়েছে অন্তত ১১ হাজার। আর প্রতিবছর এক লাখ মণের বেশি জ্বালানি কাঠ এসব চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে তামাক শুকানোর জন্য।
খাগড়াছড়িতে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে জাবারাং কল্যাণ সমিতি। সমিতির প্রকল্প কর্মকর্তা অমল ত্রিপুরা বলেন, তামাক চাষ ও তামাক পোড়ানো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। এ ছাড়া জনবসতি এলাকায় চুল্লি স্থাপন এবং এতে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করে সুনির্দিষ্ট আইন করা প্রয়োজন।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আনারকলী জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকচুল্লি নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কোনো বিধিবিধান নেই। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে পরিবেশ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে খাগড়াছড়ি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যালয় নেই।

Source: prothom-alo,3 April 2014

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org