তামাক পণ্যে কর না বাড়ানো কোম্পানির অপকৌশল : জটিল মূল্যস্তরভিত্তিক কর কাঠামোর কারণে সস্তা হচ্ছে তামাক পণ্য

তামাক পণ্য বা সিগারেটে স্তরভিত্তিক কর পদ্ধতি চালু থাকার ফলে একদিকে কোম্পানিগুলো যেমন রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে অন্যদিকে সস্তা হচ্ছে তামাক পণ্য। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে যেসব দেশে সস্তায় সিগারেট পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। এমনকি ডিম, দুধ এবং চালের তুলনায় এখানে তামাকপণ্য সস্তা। তামাক পণ্য সস্তা হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বাড়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সম্পূরক শুল্ক না বাড়িয়ে শুধু মূল্যস্তর ও ভিত্তিমূল্য সমন্বয় করার কারণেই সিগারেট-বিড়ির প্রকৃত মূল্য দিন দিন কমছে। তবে আশার কথা হচ্ছে- এবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই সনাতনি কর ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ ব্যাপারে কাজ করছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের ওপর বিদ্যমান কর কাঠামো জটিল। জটিল কর কাঠামোর কারণেই কর ফাঁকির পাশাপাশি তামাকপণ্য সস্তার মূল কারণ। আর কোম্পানিগুলো তামাকের কর না বাড়ানোর অপকৌশল হিসেবে এই জটিল কর কাঠামোকে ব্যবহার করছে। প্রজ্ঞা বলছে, সিগারেটের ক্ষেত্রে চার মূল্যস্তরভিত্তিক কাঠামো, ভিন্ন ভিন্ন মূল্যস্তরের ভিন্ন ভিন্ন হারে কর, ভ্যাট ও করারোপের ভিত্তি কর কাঠামোকে জটিল করে তুলেছে। এ জটিল কর কাঠামোর সুবিধা পাচ্ছে তামাক কোম্পানি আর বঞ্চিত হচ্ছে

সরকার। তামাক পণ্যের ওপর অধিকহারে কর বাড়ানোর বিকল্প কিছু নেই। তা ছাড়া সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর তুলে দিতে হবে। এক ধাপের সিগারেটের দাম বাড়লে মানুষ অন্যটিতে যেতে পারে। এ জন্য যখন সব তামাক পণ্যের দাম বাড়বে তখন এর ব্যবহার কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতি ৫ হাজার শলাকা বিড়ি কিনতে জাতীয় মাথাপিছু আয়ের ১ দশমিক ৮০ শতাংশ খরচ হতো ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে খরচ হচ্ছে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ খরচ হচ্ছে।

জানা গেছে, এসব তথ্য অর্থমন্ত্রীকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি এনবিআরকে সনাতনি এই কর পদ্ধতি তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে চলতি বছরে ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তামাককে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল অর্থাৎ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী তামাকে করারোপের ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে মূল্যস্তরভিত্তিক কর প্রথা তুলে দিয়ে তামাকের কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম যুবায়ের বলেন, চার স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তর থাকায় কোম্পানিগুলো বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়াও জটিল কর কাঠামোর কারণে সস্তা হচ্ছে তামাকপণ্য।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, চার স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তরে পরিবর্তে একটি মূল্যস্তর রাখার। এতে রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ থাকবে না, এক স্তরে বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে।

তামাকের কর সংক্রান্ত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, তামাক পণ্যের ওপর ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা হলে এক বছরে বাংলাদেশে ১ হাজার ৩৬০ কোটি শলাকা সিগারেট ও বিড়ির ব্যবহার কমবে এবং তামাক খাত থেকে বাড়তি রাজস্ব অর্জিত হবে ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা। কিন্তু এ ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রতি বছর সিগারেট ও বিড়ির প্রকৃত মূল্য কমছে।

Source: bhorerkagoj, 13 May, 2016

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org